অ্যালার্জি কি? অ্যালার্জির উপসর্গ সমূহ
অ্যালার্জি কি
পৃথিবীর সর্বত্র অ্যালার্জি একটি বহুবিস্তৃত রোগ। প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন
ব্যক্তিজীবনের কোনো না কোনো সময় অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়।অ্যালার্জি
সংঘটিত হয় যখন কোনো ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধক শক্তি পরিবেশের কোনো বস্তুর
উপস্থিতির কারণে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অথচ ওই বস্তুগুলো অন্য আরেকজন
লোকের মধ্য থেকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে না। এই বস্তুগুলোকে বলা হয়
অ্যালার্জেন। অ্যালার্জেন দেখা যায় ঘরের ধুলোর জীবাণুতে, পোষা প্রাণীতে,
পুষ্পরেণুতে, ছত্রাকে এবং কিছু খাদ্যে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে পরাগরেণুজনিত এই সমস্যার নাম পোলেন অ্যালার্জি বা স্প্রিং
অ্যালার্জি। এই অ্যালার্জির উদ্রেককারী বস্তু বাতাসে ভেসে প্রথমে আক্রমণ
করে নাকের ঝিল্লিতে। ফলে হাঁচি শুরু হয়। তারপর নাক বন্ধ হয় এবং নাক দিয়ে
পানি পড়ে। কারও কারও ক্ষেত্রে তীব্র হাঁচি ও সর্দি হয় এবং জ্বরের অনুভূতি
হয়। চোখও লাল হয়ে চুলকাতে থাকে। এই অবস্থার নাম হে-ফিভার। এ সমস্যায় শুধু
যে নাক-চোখ চুলকায় তা নয়, অনেকের ত্বকও চুলকাতে থাকে।
অ্যালার্জির উপসর্গ সমূহ
অ্যালার্জি শরীরে অনেক জায়গায় অনেকভাবে হতে পারে এবং উপসর্গও বিভিন্নভাবে প্রকাশ করে। যেমন :
অ্যালার্জিজনিত স্বর্দি : এর উপসর্গ হচ্ছে অনবরত
হ্যাচ্ছি আসা, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
একজিমা : চামড়া শুকনো খসখসে হয়ে যাওয়া বা কালো হয়ে যায়।
অ্যাজমা/হাঁপানি : নিত্য উপসর্গ হচ্ছে কাশি, ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, শ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া বা বুকে চাপ লাগা।
খাওয়ার অ্যালার্জি : উপসর্গ পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং ডায়রিয়া ।
অ্যালার্জির কারণ
অ্যালার্জির বিভিন্ন কারনে হতে পারে যেমনঃ ধুলাবালি, ফুলের রেণু, মাইট,
খাদ্য, পশু-পাখির লোম ও পাখনা, পোকামাকড়ের হুল ও কামড়, কেমিক্যালস, ওষুধ,
কসমেটিক্স এবং কন্টাক্ট এলার্জেন ইত্যাদি। এছাড়াও গাড়ি নির্গত ধোঁয়া,
শিল্প-কারখানার বিভিন্ন উপাদানও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। বিশেষ কিছু
পদার্থ যখন শরীরের সংস্পর্শে আসে, তখন শরীরে এক অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার
সৃষ্টি হয়। যেমন—সর্দি, চুলকানি, ত্বক ফুলে যাওয়া, হাঁচি-কাশি ইত্যাদি।
এই সৃষ্ট অস্বাভাবিক উপসর্গগুলোই হলো অ্যালার্জি।
অ্যালার্জির কারনে শরীরের কোন অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে
এটা নির্ভর করে অ্যালার্জেনের ধরনের ওপর। যেমন পুষ্পরেণু যখন নিঃশ্বাসের
সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে তখন উপসর্গ দেখা দেয় নাকে, চোখে, সাইনাসে এবং গলায়
(হে ফিভার)। খাদ্য অ্যালার্জিতে দেখা দেয় পাকস্থলি এবং অন্ত্রের সমস্যা।
সেই সঙ্গে শরীরে রাশ। একই আলার্জির কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন
উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
রোগ প্রতিরোধের উপায় ও চিকিত্সাপ্রথম ধাপ হচ্ছে অ্যালার্জির সঠিক কারণ
খুঁজে বের করা অর্থাত্ সঠিক অ্যালার্জেনকে শনাক্ত কর। পরবর্তী পদক্ষেপ
হচ্ছে অ্যালার্জেনকে এড়িয়ে চলা।
এন্টিহিস্টামিন : অ্যালার্জি রোগীদের প্রথম চিকিত্সা শুরু হয়
এন্টিহিস্টামিনের মাধ্যমে। এই ওষুধ মাস্ট সেল থেকে হিস্টামিন নির্গত হওয়া
রোধ করে। ফলে জ্বালাময় এবং অস্বস্তিকর উপসর্গ কমে যায়।
নাকের স্প্রে এবং চোখের ড্রপ : এসব ব্যবহারে অনেক উপসর্গ থেকে ত্বরিত্ মুক্তি পাওয়া যায়।
সুনির্দিষ্ট অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপি : একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিত্সা
পদ্ধতি। এর ফলে রোগ প্রতিরোধক শক্তির প্রতিক্রিয়ার ধরন পরিবর্তিত হয়। এই
পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন ধরে রোগীর শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অল্প অল্প
অ্যালার্জেন নির্যাস ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
লিংক সুত্রঃ স্বাস্থ্যকথা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন