সবাইকে স্বাগতম

এই ব্লগ সাইট ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না এ পেইজ গুরে আসার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো লাগলে আবার আসবেন। *** শিক্ষার কোন বয়স নাই, জানার কোন শেষ নাই। )

মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০১৬

রাগ ও মানসিক সমস্যা |

রাগ ও মানসিক সমস্যা |


 অ্যাংগার অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল ডিসটারবেন্স
প্রথমেই বলা হয়েছে যে, রাগ একটি সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক আবেগ বা ইমোশন, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। রাগ যেমন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় তেমনি তা নানা প্রকার মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রেও দেখতে পাওয়া যায়। ঘনঘন ও প্রচণ্ড রাগের সাথে মানসিক সমস্যার পরসপর যোগসূত্রতা বা স?পর্ক লক্ষ করা যায়। কেউ হয়তো বেশি আবেগপ্রবণ (সেনসিটিভ), আবার কেউ কেউ অস্বাভাবিক নীরব-পানসে, কোনো কিছুতেই কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখায় না। আবেগপ্রবণতা বা নির্লিপ্ততা কমবেশি হয়তো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মধ্যেও দেখা যায়। কিন্তু সাইকোটিক রিঅ্যাকশন তখনই বোঝা যায় যখন ঘটনার সাথে অতিরিক্ত আবেগের প্রকাশ বা অপ্রকাশের কোনো প্রাসঙ্গিক স?পর্ক বা কারণ থাকে না এবং যেখানে আবেগের প্রকাশ হয় তীব্র এবং নীরবতাটাও হয় অস্বাভাবিক এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তা হয় সামঞ্জস্যবিহীন। এ ধরনের রোগী অকারণে তুচ্ছ ব্যাপারে হঠাৎ রেগে গিয়ে-
  • অন্য লোককে যখন-তখন আক্রমণ করে বসতে পারে
  • ক্রোধান্বিত বা রাগান্বিত হয়ে হঠাৎ উঁচু স্থান থেকে লাফ দিয়ে পড়ে হাত-পা ভাঙতে পারে
  • আবার নিজেকে আঘাত করতে পারে
  • অন্যকেও ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে পারে
আর এদের এরকম আচরণের আগাম হদিসও পাওয়া যায় না বা বোঝা যায় না যে, অন্যের কাছে এরা কখন মারাত্মক, বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। মানসিক সমস্যায় রাগের বহিঃপ্রকাশ দারুণভাবে লক্ষ করা যায়। নানা প্রকার মানসিক সমস্যায় রাগের মাত্রাও নানা গতির, নানা প্রকৃতির হয়ে থাকে।
অনেকের ধারণা, মানসিক রোগী মাত্রই সব সময় বিপজ্জনক এবং সব সময়ই এরা উত্তেজিত বা রাগান্বিত হয়ে অন্যদের আক্রমণ করে বসে। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে এ ধরনের প্রচণ্ড রাগী মনোভাব মানসিক রোগীদের বেলায় অপেক্ষাকৃত কদাচিৎ দেখা যায়। সাধারণত দুটি কারণে মানসিক রোগীদের মধ্যে আক্রমণাত্মক ভাব ও প্রচণ্ড রাগের উদয় হয়-
  • একটি হচ্ছে, ভ্রান্ত ধারণা বা ডিলিউশন-এর বশে রোগী মনে করে যে, অন্য লোক তার ক্ষতি করবে, তাকে মেরে ফেলবে, তখন সেই কাল্পনিক শত্রুকে প্রতিহত করতে কখনো কখনো তারা প্রচণ্ড মাত্রায় উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
  • অন্যটি হচ্ছে মানসিক অসুখের কারণে উদ্ভট, আজগুবি সব চিন্তা-ভাবনার বশে রোগীর মনে হয় যে, সে বুঝি নিজেকে আপন আয়ত্তে রাখতে পারবে না, তাই এ কারণে সে হয় নিজের নয়তো অন্যের ক্ষতি করে ফেলবে-এ দ্বিধা তাকে পেয়ে বসে।
এসব উগ্র-উত্তেজিত, রাগান্বিত, ক্ষুব্ধ রোগীদের হাবভাব দেখে তাদের আপনজন এবং প্রতিবেশীরাও ভয় পেয়ে যান। তাই কখনো কখনো ঘরের মধ্যে রোগীকে আটকে রাখেন, কখনো বা তালা দিয়ে আটকে রাখেন, যাতে এরা নিজেদের এবং অন্যদের কোনো প্রকার ক্ষতি বা বিপদ ঘটাতে না পারে।
উত্তেজিত অবস্থায় রোগী যা করে তার পরিণাম বিচারের ক্ষমতা তখন তার মধ্যে থাকে না, উত্তেজনাকর সময় রোগীর মধ্যে প্রবল শক্তি দেখা গেলেও ক্রমে ক্রমে এরা আহার-নিদ্রার অভাবে শক্তিহীন হয়ে পড়ে।
নানা রকম মানসিক ব্যাধিতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হতে দেখা যায়। যেসব মানসিক রোগে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে দেখা যায়, যেসব মানসিক অসুখে এবং অবস্থার মধ্যে রোগীর প্রচণ্ড রাগ-উত্তেজনা দেখা যায় তা পাঠক/পাঠিকাদের বোঝার সুবিধার্থে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলো-
শরীরভিত্তিক নয় এমন কঠিন মানসিক রোগ যেমন-
  • সিজোফ্রেনিয়া
  • ম্যানিয়া
  • বিষণ্নতা
  • বাইপোলার ডিসঅর্ডার
  • ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার ইত্যাদি এরকম মনোব্যাধিতে প্রচণ্ড মাত্রার রাগের সৃষ্টি হতে পারে। এই রোগগুলো সাধারণত হঠাৎ করে হয়ে যায় না, একটু খোঁজ-খবর নিলেই দেখা যাবে যে এসব রোগের অন্যান্য উপসর্গ বা লক্ষণ-ইঙ্গিত আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল, পরিবারের সদস্য বা অন্যরা হয়তো তা বুঝতেই পারেনি।
শরীরভিত্তিক তীব্র স্বল্পস্থায়ী মানসিক ব্যাধি-এসব রোগে প্রচণ্ড রাগ ছাড়াও স্থান-কাল এবং পাত্রের জ্ঞান লুপ্ত হয় এবং চেতনার অবনতি ঘটে।
নানা প্রকার মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এবং মদ্যপানের ফলে উচ্ছৃঙ্খল ও রাগান্বিত অবস্থা দেখা দিয়ে থাকে।
এপিলেপসি বা মৃগীরোগীদের ফিটের পরিবর্তে অথবা ফিটের অব্যবহিত পরে কখনো কখনো প্রচণ্ড উন্মত্ত রাগ দেখা যায়।
হিস্টিরিয়া রোগেও কোনো কোনো সময়ে ব্যক্তির বিশৃঙ্খলভাব ও প্রচণ্ড মাত্রার রাগান্বিত অবস্থা লক্ষ করা যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন