হাত ও আঙুলের অবশ ভাব ও ব্যথা
হাত শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। সূক্ষ্ম থেকে স্থূল সব ধরনের কাজ হাতের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। হাতের সুস্থতা সবারই কাম্য। হাতের বিভিন্ন ধরনের রোগ বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। হাত ও আঙুলের ব্যথা, অবশ ভাব এবং দুর্বলতা উপসর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ ধরনের উপসর্গ হাতের লোকাল বা স্থানীয় এবং রেফার্ড বা দূরের কোন রোগ হতে আসতে পারে। ‘কার্পাল টানেল সিনড্রোম' (Carpal Tunnel Syndrome) এমন একটি হাতের স্নায়ু (নার্ভ) রোগ যা অধিকাংশ সময় অবশ ভাব, ব্যথা এবং দুর্বলতা উপসর্গ নিয়ে দেখা দেয়। ‘মিডিয়ান' নামক স্নায়ু (নার্ভ) চামড়ার অনুভূতি প্রদান এবং হাত ও আঙুলের পেশী মুভমেন্ট করে। এই নার্ভটি আরো ৯টি পেশীর টেনডনসহ কব্জির একটি টানেলের ভেতর দিয়ে নিম্নবাহু থেকে হাতে প্রবেশ করে। টানেলেটির তিনপাশে হাড় ও একপাশে লিগামেন্ট থাকে। যে কোন কারণে টানেলের পথ সরু হলে নার্ভের উপর চাপ পড়বে এবং রোগের উপসর্গ দেখা দিবে। ধারণা করা হচ্ছে, মহিলাদের কার্পাল টানেল সরু বিধায় পুরুষদের তুলনায় রোগ তিনগুণ বেশি হয়।
কারণসমূহ : অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারণ জানা নেই। বংশানুক্রমিক। গর্ভাবস্থা। আর্থ্রাইটিস- রিউমাটয়েড, গাউটি ও অসটিওআর্থ্রাইটিস। ডায়াবেটিস। ইনফেকশন। টিউমার- লাইপোমা, সিস্ট, গ্ল্যানগ্লিওন ও হাড়ের টিউমার। টেনডিনাইটিস (টেনডনের প্রদাহ) ও টেনডনসিথ সাইনোভিওমা। জয়েন্ট ক্যাপসুল সাইনোভিওমা। গ্রন্থি সমস্যা- হাইপোথাইরোডিজম, একরোমেগালি। ওবেসিটি (অতিরিক্ত ওজন)। হাড়ের ফ্র্যাক্চার ও বিকৃত অবস্থায় জোড়া লাগা। পুনরাবৃত্তি কাজ যেমন কম্পিউটার অপারেটর, কারখানায়, সেলাই ও ফিনিশিং এবং মাংস, পোল্ট্রি ও মাছ প্যাকিং কাজে কর্মরত ব্যক্তি।
উপসর্গ : প্রধান হাতে প্রথম এই রোগ হয়। বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনি ও মধ্য আঙ্গুলে এবং হাতের তালুতে ব্যথা হয়। হাতের তালুতে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনি ও মধ্য আঙ্গুলে কাঁটা, সুই ফুটানো বা ছিদ্র করার মত অনুভূতি হয়। হাত ও আঙুল জ্বলে বা পুড়ে যাচ্ছে এ রকম মনে হবে। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠার পর হাত ও আঙুলে অবশ এবং হাত ঝাঁকি দিতে বা নাড়তে ইচ্ছে করে। কখনও কখনও অবশভাব ও ব্যথার সাথে হাত ও আঙুল ফুলে যায়। হাত দিয়ে কিছু শক্ত করে ধরা বা তোলা কষ্টকর এবং হাত থেকে জিনিস পড়ে যায়। হাত ও আঙুলে ঘাম কম হয়। বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ার পেশীশক্তি শুকিয়ে যায়। বৃদ্ধাঙুলি হাতের তালুর কাছ থেকে দূরে সরানো কষ্টকর হয়। হাতের গরম বা ঠান্ডা অনুভূতি কমে যায়।
ডায়াগনোসিস : দ্রুত ডায়াগনোসিস করে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করলে চিরস্থায়ী ক্ষতি হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। রোগীর অসুবিধা শুনে, রোগীকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা (যেমন- ফেলেন, টিনেল ও ডারকান টেস্ট) করে এবং ল্যাবরেটরী পরীক্ষার মাধ্যমে কার্পাল টানেল সিড্রোম ও এর কারণ নির্ণয় করা সম্ভব।
রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা। কবজির এক্স-রে নার্ভ কনডাকশন (ভেলোসিটি) টেস্ট। ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি। আল্ট্রাসনোগ্রাফি এমআইআই।
কনজারভেটিক চিকিৎসা : দ্রত চিকিৎসা শুরু করতে হবে এবং কমপক্ষে ২ সপ্তাহ বিশ্রাম প্রয়োজন। প্রাথমিক রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কাজকর্মের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। হাত সোজা রাখার জন্য ব্রেসিং ও স্লিপিং ব্যবহার করতে হবে। বরফ/ঠান্ডা সেফ ব্যবহারে ফুলা কমে আসবে। ননস্টেরোইডাল এন্টিইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ সেবন। লোকাল স্টেরয়েড ও এনেসথেটিক ইনজেকশন পুশ করলে উপসর্গ লাঘব হবে। ভিটামিন বি-৬ এবং বি-১২ থেরাপি। ফিজিওথেরাপি- মেসেজ, স্ট্রেসিং ও পেশী শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম। ওকোপেশনাল থেরাপি- কনুই ও কিবোর্ড একই লেবেলে হতে হবে এবং মনিটর সোজা সম্মুখে রাখতে হবে।
কখন শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন?
৬ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ভালো না হলে। অবশ ভাব বাড়তে থাকলে। হাতের পেশী শুকিয়ে গেলে হাত ও আঙুলের দুর্বলতা বৃদ্ধি পেলে।
শল্য চিকিৎসা : ওপেন কার্পাল টানেল রিলিজ- পামার ফাসা ও পামার কার্পাল লিগামেন্ট বিচ্ছেদ করা এন্ডোস্কোপিক/আর্থ্রোস্কোপিক কার্পাল টানেল রিলিজ।
শল্য চিকিৎসার পর রোগীকে স্ট্রেসিং ও পেশী শক্তিশালী হবার ব্যায়াম করতে হবে। এন্ডোস্কোপিক বা আর্থ্রের্াস্কোপিক পদ্ধতিতে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। ৯০% রোগী সার্জারীর পর পূর্বের কাজ করতে পারে। ফলাফল ভালো না হওয়ার মূল কারণ ভুল ডায়াগনোসিস। রোগের পুনরাবৃত্তি খুবই কম এবং পুনরাবৃত্তি হলে বুঝতে হবে ডায়াগনোসিস সঠিক ছিল না।
ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন
ডিজি ল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস, মিরপুর (ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে), ঢাকা।
ফোন : ০১৭৪৬৬০০৫৮২
কারণসমূহ : অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারণ জানা নেই। বংশানুক্রমিক। গর্ভাবস্থা। আর্থ্রাইটিস- রিউমাটয়েড, গাউটি ও অসটিওআর্থ্রাইটিস। ডায়াবেটিস। ইনফেকশন। টিউমার- লাইপোমা, সিস্ট, গ্ল্যানগ্লিওন ও হাড়ের টিউমার। টেনডিনাইটিস (টেনডনের প্রদাহ) ও টেনডনসিথ সাইনোভিওমা। জয়েন্ট ক্যাপসুল সাইনোভিওমা। গ্রন্থি সমস্যা- হাইপোথাইরোডিজম, একরোমেগালি। ওবেসিটি (অতিরিক্ত ওজন)। হাড়ের ফ্র্যাক্চার ও বিকৃত অবস্থায় জোড়া লাগা। পুনরাবৃত্তি কাজ যেমন কম্পিউটার অপারেটর, কারখানায়, সেলাই ও ফিনিশিং এবং মাংস, পোল্ট্রি ও মাছ প্যাকিং কাজে কর্মরত ব্যক্তি।
উপসর্গ : প্রধান হাতে প্রথম এই রোগ হয়। বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনি ও মধ্য আঙ্গুলে এবং হাতের তালুতে ব্যথা হয়। হাতের তালুতে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনি ও মধ্য আঙ্গুলে কাঁটা, সুই ফুটানো বা ছিদ্র করার মত অনুভূতি হয়। হাত ও আঙুল জ্বলে বা পুড়ে যাচ্ছে এ রকম মনে হবে। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠার পর হাত ও আঙুলে অবশ এবং হাত ঝাঁকি দিতে বা নাড়তে ইচ্ছে করে। কখনও কখনও অবশভাব ও ব্যথার সাথে হাত ও আঙুল ফুলে যায়। হাত দিয়ে কিছু শক্ত করে ধরা বা তোলা কষ্টকর এবং হাত থেকে জিনিস পড়ে যায়। হাত ও আঙুলে ঘাম কম হয়। বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ার পেশীশক্তি শুকিয়ে যায়। বৃদ্ধাঙুলি হাতের তালুর কাছ থেকে দূরে সরানো কষ্টকর হয়। হাতের গরম বা ঠান্ডা অনুভূতি কমে যায়।
ডায়াগনোসিস : দ্রুত ডায়াগনোসিস করে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করলে চিরস্থায়ী ক্ষতি হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। রোগীর অসুবিধা শুনে, রোগীকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা (যেমন- ফেলেন, টিনেল ও ডারকান টেস্ট) করে এবং ল্যাবরেটরী পরীক্ষার মাধ্যমে কার্পাল টানেল সিড্রোম ও এর কারণ নির্ণয় করা সম্ভব।
রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা। কবজির এক্স-রে নার্ভ কনডাকশন (ভেলোসিটি) টেস্ট। ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি। আল্ট্রাসনোগ্রাফি এমআইআই।
কনজারভেটিক চিকিৎসা : দ্রত চিকিৎসা শুরু করতে হবে এবং কমপক্ষে ২ সপ্তাহ বিশ্রাম প্রয়োজন। প্রাথমিক রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কাজকর্মের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। হাত সোজা রাখার জন্য ব্রেসিং ও স্লিপিং ব্যবহার করতে হবে। বরফ/ঠান্ডা সেফ ব্যবহারে ফুলা কমে আসবে। ননস্টেরোইডাল এন্টিইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ সেবন। লোকাল স্টেরয়েড ও এনেসথেটিক ইনজেকশন পুশ করলে উপসর্গ লাঘব হবে। ভিটামিন বি-৬ এবং বি-১২ থেরাপি। ফিজিওথেরাপি- মেসেজ, স্ট্রেসিং ও পেশী শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম। ওকোপেশনাল থেরাপি- কনুই ও কিবোর্ড একই লেবেলে হতে হবে এবং মনিটর সোজা সম্মুখে রাখতে হবে।
কখন শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন?
৬ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ভালো না হলে। অবশ ভাব বাড়তে থাকলে। হাতের পেশী শুকিয়ে গেলে হাত ও আঙুলের দুর্বলতা বৃদ্ধি পেলে।
শল্য চিকিৎসা : ওপেন কার্পাল টানেল রিলিজ- পামার ফাসা ও পামার কার্পাল লিগামেন্ট বিচ্ছেদ করা এন্ডোস্কোপিক/আর্থ্রোস্কোপিক কার্পাল টানেল রিলিজ।
শল্য চিকিৎসার পর রোগীকে স্ট্রেসিং ও পেশী শক্তিশালী হবার ব্যায়াম করতে হবে। এন্ডোস্কোপিক বা আর্থ্রের্াস্কোপিক পদ্ধতিতে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। ৯০% রোগী সার্জারীর পর পূর্বের কাজ করতে পারে। ফলাফল ভালো না হওয়ার মূল কারণ ভুল ডায়াগনোসিস। রোগের পুনরাবৃত্তি খুবই কম এবং পুনরাবৃত্তি হলে বুঝতে হবে ডায়াগনোসিস সঠিক ছিল না।
ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন
ডিজি ল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস, মিরপুর (ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে), ঢাকা।
ফোন : ০১৭৪৬৬০০৫৮২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন